ডিজি মহোদয় মোঃ মিজানুর রহমান শামীম। আনসার বাহিনীর কি কি প্রদান করবে

                 

     
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়ে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই পোস্টে।

||এক নজরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী||

প্রতিষ্ঠাঃ ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ।
মূলমন্ত্রঃ শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, নিরাপত্তায় সর্বত্র আমরা।

সদর দপ্তরঃ খিলগাঁও, ঢাকা।
বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ঃ জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

মহাপরিচালকঃ মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিপি, ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি। বাহিনীর

কর্মকর্তাবৃন্দঃ অত্র বাহিনীর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ বিসিএস (আনসার) ক্যাডারের সদস্য। দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করে। তবে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তার পদে ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি লাভ করে।


নামকরণঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও তার সাহাবীরা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করলে তাদেরকে মদীনার সাহাবীরা নিরাপত্তা ও সহযোগিতা প্রদান করেন; যাদেরকে “আনসার” বলে অভিহিত করা হয়। দেশ ভাগের পর দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এ বাহিনী গঠন করা হলে মদীনার আনসারদের সঙ্গে মিল রেখে এর নামকরণ করা হয় “আনসার বাহিনী"। স্বাধীনতার পরবর্তীতে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) গঠন ও যুক্ত করে এর নামকরণ করা হয় “বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।

মহান ভাষা আন্দোলনে অবদানঃ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য শাহাদাতবরণকারী আব্দুল জব্বার ছিলেন আনসার প্লাটুন কমান্ডার।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানঃ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের আহবানে সাড়া দিয়ে প্রায় ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর আনসাররা। মুজিবনগরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে বাহিনীর ১২ জন সদস্য গার্ড অব অনার প্রদান করে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৬৭০ জন বীর আনসার সদস্য শাহাদতবরণ করেন। বাহিনীর এক জন বীর বিক্রম ও দুই জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।

জাতীয় পতাকা লাভঃ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সার্বিক আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রশংসনীয় অবদান রাখায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সালের ১০ মার্চ এ বাহিনীকে “জাতীয় পতাকা (ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড)” প্রদান করে।

স্বাধীনতা পদক অর্জনঃ জাতীয় ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা "স্বাধীনতা পদক" অর্জন করে।

বাহিনীর সাংগাঠনিক পরিচিতিঃ
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী তিনটি আলাদা আইনের অধীন তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত।

১. ব্যাটালিয়ন আনসারঃ ব্যাটালিয়ন আনসাররা বাহিনীর নিয়মিত ও স্থায়ী সদস্য। ব্যাটালিয়ন আনসার আইন-১৯৯৫ দ্বারা তারা পরিচালিত হয়। একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন ও দুটি মহিলা ব্যাটালিয়নসহ সারা দেশে মোট ৪২টি ব্যাটালিয়নে ১৭,৪১৬ জন কর্মরত রয়েছে। মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন এই উপমহাদেশের কোনো বাহিনীতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা ব্যাটালিয়ন। ব্যাটালিয়ন আনসাররা কম্ব্যাট পোষাক পরিধান করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে “অপারেশন উত্তরণ”-এ ১৬টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। সমতল এলাকায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বিভিন্ন আভিযানিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ব্যাটালিয়ন আনসাররা। দেশের অন্যান্য বাহিনীর মতো তারাও সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে।

২. সাধারণ আনসারঃ আনসার বাহিনী আইন-১৯৯৫ দ্বারা সাধারণ আনসার পরিচালিত হয়। আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে ১০ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা নিজ নিজ এলাকায় কোম্পানি ও প্লাটুন ভুক্ত হয়। দেশের প্রতিটি উপজেলায় পুরুষ সাধারণ আনসারের ১১৫ জনের একটি করে কোম্পানি ও প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২ জনের একটি করে প্লাটুন রয়েছে। আর প্রতিটি উপজেলায় মহিলা সাধারণ আনসারের ৩২ জনের একটি করে প্লাটুন রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে কোম্পানি কমান্ডার, সহকারী কোম্পানি কমান্ডার, প্লাটুন কমান্ডার ও সহকারী প্লাটুন কমান্ডার প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে সম্মানী পেয়ে থাকে। এছাড়া সাধারণ আনসাররা অঙ্গীভূত হয়ে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হাসপাতাল, স্থল, নৌ ও বিমান বন্দরসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় নিরাপত্তা প্রদান করে। তখন তারা নিয়মিতভাবে বেতন ও রেশন সুবিধা লাভ করে। বর্তমানে একান্ন হাজারেরও অধিক অঙ্গীভূত আনসার নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

৩. ভিডিপি ও টিডিপিঃ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও শহর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি) এ বাহিনীর সবচেয়ে বড় অংশ। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে ৩২ জনের একটি পুরুষ ভিডিপি প্লাটুন ও ৩২ জনের একটি মহিলা ভিডিপি প্লাটুন রয়েছে। ভিডিপি সদস্যরা ১০ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সদস্যপদ লাভ করে। পরে তারা ২১ দিনের অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ভিডিপি দলনেতা ও দলনেত্রী রয়েছে; যারা নিয়মিতভাবে মাসিক সম্মানী লাভ করে। ভিডিপি সদস্যরা সাধারণত স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যে কোন প্রয়োজনে কাজ করে থাকে। এছাড়া নির্বাচন, ধর্মীয় উৎসব ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবের সময় স্বল্প সময়ের জন্য অঙ্গীভূত হয়ে দায়িত্ব পালন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে হিল ভিডিপি রয়েছে; যারা ওই এলাকার শান্তি বজায় রাখতে নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদেরকে সহায়তা করে। হিল ভিডিপি সদস্যরা নিয়মিতভাবে মাসিক সম্মানী পেয়ে থাকে। ভিডিপি সদস্যরা খয়েরি-লাল বর্ণের জামা ও কালো প্যান্ট ইউনিফর্ম হিসেবে পরিধান করে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ৩২ জনের পুরুষ ও ৩২ জনের মহিলা প্লাটুন আছে। তারাও ভিডিপির মতো নগর এলাকায় দায়িত্ব পালন করে। তারা আকাশী রংয়ের শার্টের সঙ্গে কালো প্যান্ট ইউনিফর্ম হিসেবে পরিধান করে।

প্রেষণে দায়িত্ব পালনঃ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাগণ প্রেষণে Special Security Force (SSF)- এ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া কর্মকর্তা ও ব্যাটালিয়ন আনসাররা Rapid Action Battalion (RAB)-এ কাজ করে থাকে। বিশেষ করে মহিলা ব্যাটালিয়ন আনসাররা র‍্যাব এ বেশ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি একাডেমিঃ ঢাকার অদূরে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একাডেমি অবস্থিত। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে সাজানো এই একাডেমিতে সকল কর্মকর্তা, ব্যাটালিয়ন আনসার ও সাধারণ আনসাররা মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এছাড়া অত্র একাডেমি থেকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ মৌলিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে Masters in Human Security (MHS) ডিগ্রি অর্জন করে।

ক্রীড়া ও সংস্কৃতিঃ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্রীড়া দল রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেম্স-২০২০ এ ১৩৩টি স্বর্ণ, ৮০টি রৌপ্য ও ৫৭টি তাম্র পদক নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে তারা। এই নিয়ে টানা পাঁচবার বাংলাদেশ গেমস-এ শ্রেষ্ঠত্বের আসন নিজেদের দখলে রাখে এ বাহিনীর ক্রীড়া দল। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত টোকিও অলিম্পিক গেমস-এ সরাসরি অংশগ্রহণকারী রোমান সানা এ বাহিনীর গর্বিত সদস্য। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম অর্জন করেছে বাহিনীর অর্কেস্ট্রা দল। তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা বিটিভিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকঃ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জন্য ১৯৯৫ সালে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ বাহিনীর সদস্যরা এ ব্যাংক থেকে খুব সহজে ঋণ গ্রহণ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

কার্টেসি: চন্দন দেবনাথ স্যার, উপ-পরিচালক ও অধিনায়ক (চলতি দায়িত্ব), ৩ আনসার ব্যাটালিয়ন।

Comments

Popular posts from this blog

ভারতের মসজিদ ভেঙ্গে দিলে মুসলিম বিশ্বের এক হও ভিডিও শেয়ার করুন

৪০ মত সমাবেশ অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার উন্নয়ন জোয়ার হলো

চায়ের দোকানদার প্রধানমন্ত্রী হলে কি হয়, ভারতের চীন ও ইরান হুমকি